প্রায় দেড় দশক পর বুধবার (৭ মে) আনুষ্ঠানিকভাবে মোংলা থানা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠেয় সম্মেলনকে ঘিরে দলীয় নেতা-কর্মী, সমর্থকদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। স্থানীয় দলীয় কার্যালয় প্রতিদিন নেতা-কর্মীদের পদচারনায় মুখরিত হচ্ছে। সড়কের পাশে শোভা পাচ্ছে শীর্ষ তিনটি পদে নেতৃত্ব প্রত্যাশী ও দলীয় শীর্ষ নেতাদের ছবিসংবলিত রঙ-বেরঙের প্যানা, ব্যানার, ফেস্টুন আর পোস্টার।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার মিঠাখালীসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিএনপির নেতৃত্বপ্রত্যাশীদের প্যানা, ব্যানার আর ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। সম্মেলনকে স্বাগত জানিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে তোরণ। সেখানে শোভা পাচ্ছে দলের শীর্ষ নেতাদের ছবি। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের কর্মীরাও ব্যাপকভাবে উচ্ছ্বসিত। এদিকে সম্মেলনকে শতভাগ সফল ও বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী উপস্থিতির লক্ষ্যে প্রার্থীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন।
অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলনে থানা বিএনপির নেতৃত্ব প্রত্যাশী শীর্ষ ৩টি পদে ১১ জন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। এদের মধ্যে সভাপতি হিসেবে বর্তমান থানা বিএনপির আহবায়ক এস এম ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও সদস্য সচিব মো. আ: মান্নান হাওলাদার।
সাধারণ সম্পাদক হিসেবে উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি মো. আবু হোসেন পনি, উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ রুস্তম আলী, মৃধা ফকরুল ইসলাম ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ঝংকার ফকির।
সাংগাঠনিক সম্পাদক হিসেবে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক মৃধা ফারুকুল ইসলাম, সুন্দরবন ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. তরিকুল ইসলাম মৃধা, যুবদল নেতা শেখ মোস্তাফিজুর রহমান জনি, চাঁদপাই ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সভাপতি শেখ শাকির হোসেন ও উপজেলা যুবদলের সাবেক প্রচার সম্পাদক ও তাতীদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুব্রত মজুমদার।
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এবং বিশেষ করে জুলাই অভ্যুত্থানের পর সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় মোংলা থানা বিএনপির এই সম্মেলন বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা।
তারা বলছেন, গত দেড় দশকে মোংলা থানা বিএনপির নেতাকর্মীরা নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েছেন। আওয়ামী লীগের একচ্ছত্র দাপট ও দমন-পীড়নের কারণে অনেক বিএনপি নেতাকর্মী হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন। অনেকে ব্যবসা-বাণিজ্য হারিয়েছেন, কেউ কেউ রাজনৈতিক চাপে পড়ে রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছেন।
এছাড়া, দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলও মোংলা থানা বিএনপির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘদিনের দলীয় বিভক্তি এবং অভ্যন্তরীণ মতানৈক্যের কারণে অনেক নেতাকর্মী দোটানার মধ্যে রয়েছেন। এই বিভাজন দলের সাংগঠনিক শক্তিকে দুর্বল করেছে এবং মাঠপর্যায়ে কার্যক্রম পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। এমন বাস্তবতায় এই সম্মেলন মোংলা থানা বিএনপির জন্য একটি মোড় ঘোরানো সুযোগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বিএনপির এই নেতৃবৃন্দ বিগত বছরগুলি প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের রক্তচক্ষু, হামলা, মামলা উপেক্ষা করে হাসিনা হটাও আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। দীর্ঘ দেড় দশক আওয়ামী লীগের শাসনামলে দলীয় নেতা-কর্মীরা একাধিক মামলায় জর্জরিত ছিলেন।
সভাপতি প্রার্থী বর্তমান থানা বিএনপি’র সদস্য সচিব মো. আ: মান্নান হাওলাদার বলেন, আমার উপরে যে দায়িত্ব ছিল তা যথাযথভাবে পালন করেছি। বিগত সরকারের সময়ে নানাভাবে নিজে নিপীড়নের শিকার হয়েছি। কিন্তু তারপরও দলীয় নেতাকর্মীদের কাছ থেকে দূরে সরে যাইনি। আমি আশা করি তারা আমার কাজের প্রতিদান দেবে। আর এই সম্মেলন একটি মাইল ফলক হিসেবে ইতিহাসে লেখা থাকবে বলেও জানান তিনি।
তরুণ নেতাকর্মীরা তুলনামূলকভাবে মাঠে সক্রিয় থাকায় তাদের আধিপত্য রয়েছে সর্বত্র। তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের আশা, এই সম্মেলনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক চর্চার ভিত আরও দৃঢ় হবে এবং দল নতুন নেতৃত্ব পাবে, যারা মাঠপর্যায়ের রাজনীতিকে আরও সক্রিয় করবে।
খুলনা গেজেট/এএজে